ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি, যা পেশাদারদের দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম অফার করে। এই প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে এক্সিকিউটিভ মাস্টার অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (EMPA) একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় কোর্স, যা পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, গভর্ন্যান্স এবং নীতি নির্ধারণে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য তৈরি। EMPA প্রোগ্রামটি মিড-ক্যারিয়ার পেশাদারদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যারা তাদের পেশাগত কাজ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে চান। এই কোর্সটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা এবং উন্নয়ন খাতে কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের EMPA প্রোগ্রামটি পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, নীতি বিশ্লেষণ এবং গভর্ন্যান্সের একটি ব্যাপক বোঝাপড়া প্রদানের জন্য তৈরি। এই কারিকুলামটি তাত্ত্বিক জ্ঞান এবং ব্যবহারিক দক্ষতার সমন্বয়ে তৈরি, যা শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করে। কোর্সটিতে পাবলিক পলিসি, অর্গানাইজেশনাল বিহেভিয়ার, আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং কৌশলগত পরিকল্পনার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও, প্রোগ্রামটি নেতৃত্ব এবং ব্যবস্থাপনামূলক দক্ষতা বিকাশের উপর জোর দেয়, যা কার্যকর পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। EMPA প্রোগ্রামটি সাধারণত দুই বছর মেয়াদী এবং কর্মজীবী পেশাদারদের সুবিধার জন্য সপ্তাহান্তে বা সন্ধ্যায় ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইএমপিএ কোর্সে ভর্তি ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের EMPA প্রোগ্রামে ভর্তি প্রক্রিয়া অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এবং যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের জন্য একটি কঠোর প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। প্রার্থীদের অবশ্যই নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হবে। সাধারণত, আবেদনকারীদের একটি স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে, পছন্দসই বিষয়গুলো হলো পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, রাজনীতি বিজ্ঞান, অর্থনীতি বা সামাজিক বিজ্ঞান। এছাড়াও, প্রার্থীদের পেশাগত অভিজ্ঞতার একটি ন্যূনতম সময় থাকতে হয়, যা সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত হতে পারে। এটি নিশ্চিত করে যে প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীরা পর্যাপ্ত ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হন, যা শিক্ষার পরিবেশকে সমৃদ্ধ করে।
EMPA প্রোগ্রামের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং শীর্ষস্থানীয় জাতীয় পত্রিকায় একটি ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হয়। আগ্রহী প্রার্থীদের একটি অনলাইন আবেদন ফর্ম জমা দিতে হয়, যার সাথে প্রয়োজনীয় সহায়ক নথি সংযুক্ত করতে হয়। এই নথিগুলোর মধ্যে সাধারণত একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, পেশাগত অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র, সুপারিশপত্র এবং একটি স্টেটমেন্ট অব পারপাস (ক্যারিয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিবরণী) অন্তর্ভুক্ত থাকে। স্টেটমেন্ট অব পারপাস আবেদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এটি প্রার্থীদের তাদের ক্যারিয়ার লক্ষ্য, EMPA প্রোগ্রামে ভর্তির উদ্দেশ্য এবং পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ক্ষেত্রে তাদের অবদান কী হবে তা ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়।
আবেদনের শেষ তারিখ পার হওয়ার পর, বিশ্ববিদ্যালয় জমা দেওয়া সকল আবেদনপত্রের একটি যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এরপর শর্টলিস্টেড প্রার্থীদের একটি লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই পরীক্ষাটি প্রার্থীদের বিশ্লেষণাত্মক, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা মূল্যায়ন করে। পরীক্ষাটি সাধারণত বহুনির্বাচনী প্রশ্ন, রচনা লেখা এবং কেস স্টাডি বিশ্লেষণের সমন্বয়ে তৈরি হয়। কিছু ক্ষেত্রে, প্রার্থীদের একটি সাক্ষাৎকারেও অংশ নিতে হতে পারে। সাক্ষাৎকারটি ভর্তি কমিটিকে প্রার্থীর যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্বের সম্ভাবনা এবং প্রোগ্রামের জন্য সামগ্রিক উপযুক্ততা মূল্যায়নের সুযোগ দেয়।
ভর্তি পরীক্ষা এবং সাক্ষাৎকার সম্পন্ন হওয়ার পর, প্রার্থীদের এই মূল্যায়নগুলোর পারফরম্যান্স এবং তাদের একাডেমিক ও পেশাগত পটভূমির ভিত্তিতে চূড়ান্ত নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত প্রার্থীদের EMPA প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য নোটিফিকেশন পাঠানো হয় এবং ক্লাস শুরু, কোর্স স্ট্রাকচার এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদান করা হয়। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওয়া এবং আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তাদের স্থান নিশ্চিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের EMPA প্রোগ্রামের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর বিশিষ্ট শিক্ষকমণ্ডলী, যারা পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ একাডেমিক এবং পেশাদার ব্যক্তিত্ব। শিক্ষকরা তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ক্লাসরুমে নিয়ে আসেন, যা শিক্ষার্থীদের পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও গভর্ন্যান্সের জটিলতা সম্পর্কে মূল্যবান ধারণা প্রদান করে। ক্লাসরুম লেকচারের পাশাপাশি, প্রোগ্রামটিতে কেস স্টাডি, গ্রুপ আলোচনা এবং ফিল্ড ভিজিটের মতো বিভিন্ন শিক্ষণ পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা শিক্ষার্থীদের একটি সামগ্রিক শিক্ষার অভিজ্ঞতা প্রদান করে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের গবেষণায় জড়িত হতে এবং সেমিনার ও ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করে, যা তাদের বিষয়বস্তুর বোঝাপড়াকে আরও গভীর করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের EMPA প্রোগ্রামের স্নাতকরা সরকার, বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং বেসরকারি খাতে নেতৃত্বের ভূমিকা পালনের জন্য প্রস্তুত হন। এই প্রোগ্রামটি শিক্ষার্থীদের কার্যকর পাবলিক পলিসি ডিজাইন ও বাস্তবায়ন, পাবলিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের লক্ষ্য অর্জনে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা প্রদান করে। এছাড়াও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের EMPA ডিগ্রিটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত সম্মানিত, যা স্নাতকদের জন্য ক্যারিয়ারের বিস্তৃত সুযোগ উন্মুক্ত করে। এই প্রোগ্রামের অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী সরকার ও অন্যান্য সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন এবং তাদের সম্প্রদায় ও জাতির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ মাস্টার অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (EMPA) প্রোগ্রামটি মিড-ক্যারিয়ার পেশাদারদের জন্য একটি উৎকৃষ্ট পছন্দ, যারা পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও গভর্ন্যান্সে তাদের ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতে চান। প্রোগ্রামটির কঠোর কারিকুলাম, অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী এবং ব্যবহারিক দক্ষতার উপর জোর দেওয়ার কারণে এটি পাবলিক সেক্টরে অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য একটি মূল্যবান বিনিয়োগ। প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি প্রক্রিয়া এবং ব্যাপক শিক্ষার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের EMPA প্রোগ্রামটি দেশের মেধাবী ব্যক্তিদের আকর্ষণ করে চলেছে, যা পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে কার্যকর ও নৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে অবদান রাখছে।